ঘামাচি ভালো করার উপায়-কিভাবে ঘামাচি বের হওয়া বন্ধ করব
আজকে আমরা যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব সেটি হলো ঘামাচি ভালো করার উপায়। ঘামাচিকে অনেকেই সমস্যা হিসেবে মনে করে আবার
অনেকেই রোগ মনে করে। ঘামাচি ভালো করার উপায় এবং কিভাবে ঘামাচি বের হওয়া বন্ধ
করব এই বিষয়ে সবকিছু জানতে পুরো আর্টিকেলটি পড়ুন।
গরম ঘাম আর আদ্রতা এসব কিছু মিলেই আমাদের শরীরে তৈরি হয় ঘামাচি। বিশেষ করে এই সমস্যা বা রোগটি যেটি বলেন না কেন গ্রীষ্মকালে এর প্রকোপ বেশি দেখা যায়। ঘামাচি বেশিরভাগ সময় ছোট বাচ্চাদের শরীরে বেশি দেখা যায়। ঘামাচি ভালো করার উপায় অনেকগুলো আছে। যেগুলো আমি নিচে পয়েন্ট আকারে দিয়ে দিচ্ছি যেটি আপনার কাছে খুব সহজ মনে হবে আপনি সে উপায়টি অবলম্বন করতে পারেন।
গরমে ঘামাচি কেন হয়:
যখন গ্রীষ্মকাল বা গরমকাল চলে তখন সূর্যের তীব্র তাপের কারণে আমাদের শরীরে ঘামাচি
বের হয়। ঘামাচির প্রকোপ টা বিশেষ করে শুধু গরমকালেই দেখা যায়। সেজন্য আমাদের
ঘামাচি ভালো করার উপায় সম্পর্কে জানা উচিত। আজকে লিখব গরমের ঘামাচি নিয়ে।
আমাদের ত্বকের যে গর্মগ্রন্থি রয়েছে এর সাথে এক ধরনের জীবাণু মিশ্রিত থাকে। আর
এই জীবাণুর নাম (EPIDERMIS)। গরমের সময় স্বাভাবিকভাবে গর্ম যে গ্রন্থটি রয়েছে
সেখান থেকে অনেক বেশি ঘাম নিঃসৃত হয়।
আরো পড়ুন: পেটের গ্যাস কমানোর সহজ উপায়
এ গর্ম গ্রন্থি হতে যে ঘাম নিঃসৃত হয় আর সে ঘামের সাথে যদি ধুলোবালি বা ময়লার
পরিমান বেশি থাকে তাহলে দেখা যায় যে গর্ম গ্রন্থটি রয়েছে সেটির যে স্বাভাবিক
ঘাম নিঃসৃত হওয়ার যে রাস্তাটি সেটি বন্ধ হয়ে যায়। আর যখন এটি বন্ধ হয়ে যায়
তখন উৎপত্তি হয় ঘামাচির। ঘামাচি ভালো করার উপায় এবংকিভাবে ঘামাচি বের হওয়া বন্ধ
করব ও ঘামাচি কত প্রকারের হয় এসব বিষয় জানতে নিচে পড়ুন।
ঘামাচি কত প্রকারের হয়:
- মিলিয়ারিয়া ক্রিস্টালিনা
- মিলিয়ারিয়া প্রফান্ডা
- মিলিয়ারিয়া রুবরা
ঘামাচি ভালো করার উপায় জানার জন্য আপনাকে জানতে হবে ঘামাচি কত প্রকার ও কি কি।
ঘামাচি মূলত তিন প্রকার। তবে একটি কথা ঘামাচি ভালো করার উপায় শুধু জানলেই হবে না
আপনাকে এটাও জানতে হবে কিভাবে ঘামাচি বের হওয়া বন্ধ করব। এখন পড়ুন তিন প্রকার
ঘামাচির বিবরণ।
প্রথমে যেটি রয়েছে মিলিয়ারিয়া ক্রিস্টিনিয়া। মিলিয়ারিয়া ক্রিস্টিলিনা যদি রয়েছে
এটি মূলত যে কোন সময় স্বাভাবিকভাবেই দেখা যায়। এইটার উপসর্গটা দেখা যায়
হালকাভাবে। এটি ত্বকের এপিডারমিক্স এর উপরে হয়ে থাকে ছোট ছোট আকারের।
দ্বিতীয়টি হল মিলিয়ারিয়া প্রফান্ডা। এ ধরনের ঘামাচি অনেকটা মিলিয়ারিয়া
ক্রিস্টিনিয়ার মতই। অর্থাৎ এইটারও তেমন কোন বড় কোন উপসর্গ থাকে না। হালকা
মাত্রায় হয়ে থাকে এবং স্বাভাবিক যে ঘামাচি সেটির মতোই দেখা যায়।
এরপর তিন নম্বরে যেটি আছে সেটি হল মিলিয়ারিয়া রুবরা। আমরা যে ঘামাচির যন্ত্রণা
অনুভব করি সেটি হল এই তিন নাম্বার মিলিয়ারিয়া রুবরা। যখন অতিরিক্ত পর্যায়ে ধুলো
ময়লা জমে যায় এবং আমাদের যে গর্ম নালিটি রয়েছে সেটি বন্ধ হয়ে যায় বা আবদ্ধ
করে ফেলে। অর্থাৎ যে রাস্তাটি দিয়ে বা যে পথটি দিয়ে ঘাম নিঃসৃত হবে বের হবে সে
রাস্তাটি যখন ব্লক হয়ে যায় তখন যে ঘামাচি গুলো হয় সেটাকে মিলিয়ারিয়া রুবরা
হিসেবে ধরা হয়।
এই মিলিয়ারিয়া রুবরা হলে তোকে লাল লাল ফুসকুড়ি পড়ে, পানির ফোটা দেখা যায়। এটার
অনেক বেশি চুলকানি হয় এবং যন্ত্রনা হয়। আর এটি শরীরের গভীর থেকে হয়ে থাকে।
ঘামাচি হলে কি কি করা যাবে না:
ঘামাচি ভালো করার উপায় এর প্রধান টপিক এই প্যারাতে লিখছি। আপনার ঘামাচি যদি
স্বাভাবিক অবস্থায় থাকে অথবা যদি সিরিয়াস অবস্থাতেও চলে যায় তাহলে যে জিনিসটি
করবেন না সেটি হল নখ দিয়ে ঘামাচি চুলকাবেন না। এরপর অতিরিক্ত খারাপ অবস্থা হলে
কোন প্রসাধনি ব্যবহার করবেন না। ঘামাচি হলে লাইলনের যে কাপড় গুলো আছে যেমন আমরা
গ্রাম্য ভাষায় যেটাকে পলেস্টার কাপড় বলি সেগুলো কিন্তু ব্যবহার করা যাবে না।
এমনকি তারিখ কাপড় ও ব্যবহার করা যাবে না এগুলো ব্যবহার করলে ঘামাচি আরো বেড়ে
যাবে।
পোশাক পরিধানের ক্ষেত্রে সব সময় ঢিলেঢালা পোশাক পরবেন আর চেষ্টা করবেন সুতি
কাপড়ের পোশাক পরার জন্য। কোন অবস্থাতে টাইপ পোশাক পরিধান করা যাবে না। খেয়াল
রাখতে হবে ঘামাচি আক্রান্ত জায়গা গুলো যেন সবসময় পরিষ্কার থাকে। খেয়াল রাখবেন
কোনোভাবে যেন ধুলোবালি বা ময়লা ঘামাচি আক্রান্ত স্থানে না পড়ে।
ঘামাচি হলে ঘামাচি স্থানে কখনো বডি স্প্রে ব্যবহার করবেন না। আমাদের শরীরে
এমনিতেই কিছু ব্যাকটেরিয়া থাকে যেগুলো আমাদের জন্য খুবই উপকারী। আর এই
ব্যাকটেরিয়া গুলো দূষিত পদার্থগুলো আমাদের শরীরের ভিতরে যেতে দেয় না। আর আপনি
যখন বডি স্প্রে ব্যবহার করেন তখনই ব্যাকটেরিয়া গুলো মারা যায়।
সেজন্য ঘামাচির স্থানে কখনো বডি স্প্রে ব্যবহার করবেন না। আমার চেয়ে বেশি হলে
দিনে অন্তত দু বার গোসল করতে হবে। গোসল করার সময় কোন জীবাণু নাশক সাবান বা দামি
কিছু ব্যবহার করার দরকার নেই। কিন্তু গোসল করা খুব জরুরী সেজন্যে দিনে দু বার
গোসল করবেন।
ঘামাচি দূর করার ঘরোয়া উপায়:
নিম পাতা: একটু গরম পানিতে ধুয়ে বেটে নিবেন। এরপর যেখানে যেখানে ঘামাচি
হয়েছে সেখানে লাগিয়ে দিবেন। আক্রান্ত স্থানে লাগানোর পরে এটিকে শুকাতে দিবেন।
এটি শুকিয়ে গেলে পরিষ্কার কোন ভিজে কাপড় বা তোয়ালে দিয়ে আস্তে আস্তে জায়গাটি
পরিষ্কার করবেন। এটি সারাদিনে চার থেকে পাঁচ বার করবেন যদি এতবার করতে না পারেন
অন্ততপক্ষে দুইবার করবেন।
বেকিং সোডা: এক কাপ গরম পানিতে এক চামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে নিন। এরপর একটি
কাপড় ভিজিয়ে যে জায়গাতে ঘামাচি হয়েছে সে জায়গাতে একটু একটু করে লাগিয়ে দিন।
এতে করে খুব উপকার পাবেন খুব তাড়াতাড়ি।
এলোভেরা: এলোভেরার রস কিন্তু ঘামাচি কে খুব তাড়াতাড়ি গ্রাস করতে পারে।
কিছু এলোভেরা নিয়ে সেদিকে ব্লেন্ডারে রস করে নিয়ে আক্রান্ত স্থানে কিছুক্ষণ
লাগিয়ে রাখুন। এরপর পরিষ্কার পানি দিয়ে জায়গাটি দিয়ে ফেলো। দিনে দুই থেকে
তিনবার এ কাজ করবে তাহলে খুব দ্রুত ঘামাচি থেকে মুক্তি পাবেন।
লেবুর শরবত: দুইটা থেকে তিনটা লেবু নিয়ে সেগুলোকে কেটে রসগুলো একটি মগের
মধ্যে নেই। এরপর সামান্য পানি মিশে এটিকের শরবত বানান। স্বাদের জন্য চিনি মিশাতে
পারেন। লেবুর শরবত ঘামাচি হওয়া থেকে আপনাকে রক্ষা করবে।
তেজপাতা: তেজপাতা সারারাত গোলাপ জলে ভিজিয়ে সে জল টা ঘামাচি আক্রান্ত
স্থানে লাগিয়ে রাখবেন। ২০ থেকে ৩০ মিনিট পর পরিষ্কার পানি দিয়ে জায়গাটি আবার
ধুয়ে ফেলুন।
সবুজ শাক: আমাদের শরীরের জন্য সবুজ শাক বা যে কোনো ধরনের শাক আমাদের
শরীরের জন্য খুবই উপকারী। এমন কি এটি ঘামাচি তৈরি হওয়ার ব্যাকটেরিয়ার সাথেও
লড়াই করে। সেজন্য চেষ্টা করবেন বেশি বেশি সবুজ শাক খাওয়ার জন্য।
ফিটকিরি: আমরা জানি ফিটকিরি পানি বিশুদ্ধকরণ এ ব্যবহৃত হয়। এটি একটি
অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে পরিচিত। এতে রয়েছে ন্যাচারাল খনিজ উপাদান। গোসলের পূর্বে
ফিটকিরিটি ভিজে নিবেন। আপনার যেই যেই স্থানে ঘামাচি বের হয়েছে সেই সব জায়গায়
ফিটকিরিটি আলতোভাবে ডলাদিন। আপনি চাইলে গোসলের পানিতেও সামান্য ফিটকিরি মিশিয়ে
নিতে পারেন। এভাবে প্রতিদিন গোসল করতে থাকুন।
ঘামাচি পাউডার কোনটা ভালো:
- আইস কুল পাউডারতিব্বত ঘামাচি পাউডার
- ট্যালকম পাউডার
- মিল্লাত ঘামাচি পাউডার
- মেরিল পাউডার
- ডার্মিকুল পাউডার
শিশুদের ঘামাচি পাউডার এর নাম:
- Mother Care Baby Powder
- Dusting Powder for Babies-Mamaearth
লেখকের শেষ কথা:
আশা করি ঘামাচি ভালো করার উপায় ও ভবিষ্যতে কিভাবে ঘামাচি বের হওয়া বন্ধ করবেন
এ বিষয়ে আপনাদের সঠিক তথ্য দিতে পেরেছি। স্বাস্থ্য বিষয়ক যেকোনো সমস্যা
আপনাদের থাকলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন আমি সে বিষয়ে সঠিক সমাধান দেওয়ার
চেষ্টা করব। অথবা আপনি চাইলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন যোগাযোগ করার জন্য
যোগাযোগ পেজ এ গিয়ে আমাদের দেওয়া ইমেইলে ইমেইল করতে পারেন। আর্টিকেলটি পড়ার
জন্য আপনাদের ধন্যবাদ।